নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানা থেকে আরো ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে তিনজনের মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এ ঘটনায় পৃথক শোক বার্তায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ৪৯ জনের মৃতদেহ পাঠানো হয়। তবে চতুর্থ তলা পর্যন্ত যেতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। উপরের দুই ফ্লোরে এখনও আগুন জ্বলছে।নিহতের চূড়ান্ত সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। ৫-৬ তলায় তল্লাশির পর উদ্ধার অভিযান শেষ হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস, কোমল পানীয় ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুনে পুড়ে এবং লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫ জন। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। কারখানায় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আগুন লাগে নারায়ণগঞ্জের ভুলতার হাসেম ফুডের ফ্যাক্টরিতে। ভবনের নিচ তলায় কার্টনের গুদাম থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিকদের অনেকে। লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়াদের মধ্যে দুই নারী শ্রমিককে হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। মারা গেছেন এক পুরুষ শ্রমিকও।
আহতদের ইউ এস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে না পারলেও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কারখানায় তেলসহ বিভিন্ন রকম দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ২০ দিন আগেও ফ্যাক্টরটির চারতলায় আগুন লাগে। তবে, সে সময় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুসের কারখানার আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ কর্মীদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠেছে গেট এলাকা। শ্রমিকদের দাবি, আগুন লাগার পরই আটকে দেয়া হয় কারখানার কলাপসিবল গেট। এমন কি একটি ফ্লোরে আগুন জ্বলতে থাকলেও কাজে বাধ্য করা হয় অন্য ফ্লোরের শ্রমিকদের। এ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি ঘটনাস্থলে উপস্থিত কারখানা কতৃপক্ষের কেউ। এছাড়া, আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ, সেটিও জানাতে পারেননি তারা।
নাজমা বেগমর ছোট ছেলে রিপন খান ইয়াসিন কাজ করতেন সেজান জুসের কারখানার চার তলায়। পড়াশোনার ফাঁকে পরিবারের জন্য কিছু বাড়তি উপার্জন করতে কারখানায় কাজ নেন চার মাস আগে। গতকাল আগুন লাগার পর থেকে খোঁজ মিলছে না রিপনের। তাই মা নাজমা বেগমের আকুতি থামছে না।
আগুনের ঘটনার পর খোঁজ মিলছে না কল্পা রানী বর্মনের। তার ভাই কল্পার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যাকে পাচ্ছেন তাকেই উন্মুখ হয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ছবির এই মেয়েটিকে কেউ দেখেছেন কিনা?
নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলে আছেন তার ছোট ভাই টিপু সুলতান। আগুন লাগার পরে স্বজনদের মোবাইলে ফোন করে মাফ চান মোহাম্মদ আলী। মাত্র দুই মাস আগে বাবা হয়েছেন তিনি। ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপু সুলতান।
শ্রমিকরা বলছেন আগুন লাগার ঘটনা জানতে পেরে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। তারপর ও কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাদের। তালা দেয়া হয় গেইটে।
এ অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে রাজী হন সেজান জুসের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এ ব্যাক্তি। পরে অবশ্য ফ্যাক্টরি এডমিনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন । নিজেকে দাবি করেন বহিরাগত হিসেবে।
শ্রমিকরা জানান, রূপগঞ্জের র্কর্ণগোপ এলাকার সেজান জুসের কারখানায় কাজ করতেন প্রায় প্রায় সাত হাজার কর্মচারী। ছয় তলা ভবনে র এ কারখানাটির একটি ফ্লোরে আগুনের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে।
//ইয়াসিন//